মোঃ ফরমান উল্লাহ, নেত্রকোণা জেলা প্রতিনিধি
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য মাছ ধরার"পলো"।প্রাচীণকালে মানুষ মাছ ধরতো পলো, জাল, কুঁচ,চায় ও আইড়া দিয়ে। এখন আর এগুলো দেখা যায় না। বর্তমানে মাছ ধরার জন্য কারেন্ট জাল, চায়না বাইর আবিস্কার হয়েছে।
কারেন্ট জাল ও চায়না বাইর এর ভেড়াজালে বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছ গ্রামের মাছ ধরার প্রধান মাধ্যম "পলো"। ৭০-৮০ দশকের দিকে শীত শুরু হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে খাল-বিলের পানি কমে আসলে এলাকার মানুষ দল বেঁধে খাল-বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরতো। গ্রামে এভাবে পলো দিয়ে মাছ ধরাকে পলো বাউয়া বা পলো বাইচ বলা হতো। এখন আর এগুলো চোখে পড়ে না।
কোন দিন কোন খাল বা বিলে পলো বাইচ হবে তা হাটের দিন বাজারে ঢোল পিঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হতো। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দল বেঁধে পলো নিয়ে চলে আসতো ভোর বেলায়। কেউ কেউ আবার জাল নিয়েও নেমে পড়তো মাছ ধরার জন্য। কোন একজন বড় আকারের মাছ ধরতে পারলে সকলে মিলে সমসূরে চিৎকার দিতো। এই সমসূরে চিৎকারকে গ্রামের ভাষায় ডাক ভাঙ্গা বলা হত।
বর্তমানে কারেন্ট জাল এবং বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে মাছ ধরার ফলে কমে গেছে প্রাকৃতিক মাছ। এখন খালে-বিলে আগের মত দেশীয় মাছ পাওয়া যায় না। আর দল বেঁধে পলো বাইচও হয় না। আমরা ছোট সময় দেখছি গ্রামের প্রতিটি ঘরে মাছ ধরার পলো,জাল, ছায়, কুঁচ আইড়া ইত্যাদি যন্ত্র পাতি থাকতো। এখন আর এগুলো দেখা যায় না।
গত কয়েক দিন আগে দল বেঁধে পলো দিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা উপজেলার তেঘরিয়া বাজার সংলগ্ন বিলে। হাজার হাজার মানুষ ভোরে পলো, জাল নিয়ে তেঘরিয়া বিলে মাছ ধরতে আসছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে মানুষ কোন যুদ্ধে যাচ্ছে। লাঠির আগায় পলো ঝুলিয়ে কাঁধে করে নিয়ে চলছে কার আগে কে যাবে। এ যেন কোন যুদ্ধ জয়ের লড়াই।